ইসলামে নারীর অধিকারসমূহ । ইসলামে নারীর অধিকার
ইসলামে নারীর অধিকারসমূহ নিয়ে আমি "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। আমরা আজকে ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে জানব। ইনশাআল্লাহ।
আর নারীরও রয়েছে অধিকার
দাওয়াতী মিছিলে অংশ গ্রহণের অধিকার শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যেই সংরক্ষিত! ব্যাপারটি আদৌ এমন নয় বরং নারীদেরও রয়েছে সে মিছিলে শামিল হওয়ার পূর্ণ অধিকার। বরং এটি সময় ও শরয়ী বিধানের দাবী। শরয়ী আদেশ নিষেধ ও বাধ্য-বাধকতা যখন নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান ভাবে প্রযােজ্য। মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আরােপিত যাবতীয় নির্দেশাবলী দাওয়াতকর্ম বিষয়ক হােক কিংবা শিক্ষা মূলক, আন্দোলন ধর্মী হােক কিংবা উপদেশ মূলক বরং সর্ব বিষয়ক নির্দেশাবলীর দ্বারাই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। নারী-পুরুষ উভয়কে সমান ভাবে। এবং প্রচলিত কিছু রীতির অনুবর্তিতা, কল্যাণমূলক আদর্শ ধারণ ও কতিপয় বিভ্রান্তির নিরসন কল্পে নারীদের দাওয়াতী অভিযান ও দাওয়াত কর্মীদের দীর্ঘ মিছিলে শামিল হওয়া এবং অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানাের নিমিত্ত্বে নিরলস যাত্রার ব্রত গ্রহণ সংশিষ্ট কিছু বিধি-বিধানের বিশেষণ অতীব জরুরী। শরয়ী দায়িত্বভার অর্পন বিষয়ক কুরআন-সুন্নাহর যাবতীয় উদ্ধৃতি নারী পুরুষ উভয়কে শামিল করে ব্যাপকাৰ্থবােধক শব্দমালায় বর্ণিত হয়েছে। কারণ দায়িত্ব অর্পণের মূলভিত্তি হচ্ছে ইসলাম। আর নারী-পুরুষ উভয়েই সমান্তরালভাবে ইসলামের মাধ্যমে তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে। যেমন ইরশাদ হচ্ছেঃ
মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম সম্পাদন করবে, নিশ্চয় আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দান করব। (সূরা নাহলঃ ৯৭)
এছাড়াও এ মর্মে প্রচুর আয়াত ও সহীহ হাদীস রয়েছে যেগুলাে যােগ্যতা ও সামর্থ অনুপাতে দায়িত্ব ও অধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রমাণ করে। এমনি করে জীবনের প্রতিটি পর্বে দৃষ্টিপাত করলে সুস্পষ্টভাবে যে চিত্র ফুটে উঠে, তা হচ্ছে প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার। যেমন জ্ঞান অর্জন, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ, এবং সমাজ সংস্করণ ও সংশােধন ইত্যাদি। এসব কিছুর বিবেচনায় বলতে হয় নারীদের দাওয়াতী ময়দানে যােগদান ও কাজে অংশগ্রহণ অপরিহার্য ভাবে জরুরী। উদাহরণস্বরূপ, তাদের কাফেলায় যোগদান করা, দাওয়াহ কর্মীদের সহায়তা প্রদান করা, বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে কাফেলাকে রক্ষা করা এবং পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও সর্বোচ্চ শ্রম ব্যয় নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া বাস্তবতাও তাে এই যে, দায়িত্ব কিংবা অধিকার, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ সকলেই একে অপরের পরিপূরক। যে কোন কাজ পূর্ণতায় পৌঁছাতে হলে একজন অপরজনকে সাহায্য করতেই হয়। আর এসব দিকের বিবেচনায় উভয়ের মাঝে সাম্য ও সমতার সম্পর্ক জরুরী। এই বিশাল কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমতা এজন্যেই নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে শেষ পরিণতিতে জীবনে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অবদানের ক্ষেত্রে ইনসাফ বাস্তবায়িত হয়। আর এর মাধ্যমেই মূলত আবাদ হবে পৃথিবী,সম্ভব হবে চিরন্তন উন্নতি ও সমৃদ্ধি। এর মাধ্যমেই সম্ভব হবে শরীয়তের উদ্দেশ্য তথা দ্বীন, মানুষ ও বংশ পরম্পরার সংরক্ষণ এবং প্রতিষ্টিত হবে আলাহ তা'আলার পরিপূর্ণ দাসত্ব। যার প্রকৃত রূপ হচ্ছে পৃথিবীতে তাঁর বিধানের বাস্তবায়ন।
উদাহরণ স্বরূপঃ দেনমােহরের ক্ষেত্রে নারীদের অীধকারের বিপরীতে রয়েছে পুরুষদের ন্যায় সঙ্গতভাবে আনুগত্য পাওয়ার অধিকার। অনুরূপভাবে নারী তার সতীত্ব রক্ষা করবে মর্মে পুরুষের যে অধিকার, তার বিপরীতে রয়েছে পুরুষের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব।
সন্তান লালন-পালনে নারীর দায়িত্বের বিপরীতে রয়েছে পুরুষের পরিবারের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব। হ্যাঁ, সন্তান লালন-পালন, শিক্ষাদান ইত্যাদি বিষয়ে পুরুষেরও দায়-দায়িত্ব রয়েছে ঠিকই তবে সেটি নারীর দায়িত্বের তুলনায় কম। এ ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ অধিকার ও দায়িত্ব আদায় নিশ্চিত করণের মাধ্যমেই মূলত জীবনে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকবে।
সমগ্র জাতির পক্ষে সে সমাজে ঐশী-দিক নির্দেশনা ও নবীদের অনুসৃত পন্থা মাফিক বসবাস সম্ভব হবে এবং দাওয়াতকর্ম ও সঠিক পথ বিচ্যুতি হতে নিরাপদে থাকা যাবে। যেমন একটি অনুমােদিত ইসলামী আমল, প্রত্যেক মুসলিম নারী হােক কিংবা পুরুষ উভয়ের উপরই সমভাবে ওয়াজিব। কিন্তু বাস্তবায়ন, অবদান, অধিকার ও কর্তব্যের অনুপাতক্রমে তাতে কম-বেশি তারতম্য হয়ে যায় । আর কোন সন্দেহ নেই যে, একটি মুসলিম পরিবার নির্মাণ ও প্রজন্ম গঠনের মহানক্ষেত্রে একজন নারীর অবদান এতই গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উল্লেখ করার প্রয়ােজন নেই, সকলের নিকটই পরিস্কার।
নারী সেতাে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, লালন-পালনের বিদ্যালয়। সন্তান প্রাথমিক পর্যায়ে তার বাবার নিকট যতটুকু শিক্ষাপায় এরচে অনেক বেশী প্রশিক্ষণ পায় তার মার নিকট। বরং একজন নারীর জীবনের প্রথম ও প্রধান দায়িত্বই হল লালন-পালন ও প্রশিক্ষণ দানের এ মহান কর্তব্য পালনে সফল হওয়া। আর এ প্রশিক্ষণ দান হবে সম্মান, মর্যাদা ও বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে। সুন্দর সুন্দর উপদেশ দান ও কল্যাণের প্রতি আহ্বানের মাধ্যমে এবং সমগ্র মানবতাকে ধ্বংস ও বিলুপ্তির হাত থেকে উদ্ধারের নিমিত্ত্বে। নারী প্রকৃতিগত ভাবে এমন যে, যদি পুরুষকে কল্যাণের প্রতি ধাবিত ও উৎসাহিত না করে তাহলে সে অকল্যাণ ও অনিষ্টের ক্ষেত্রে তার সহায়ক হবে। প্রত্যেকটি বিষয় তার বিপরীত বিষয়ের সাহায্যে অনুমান করা যায়।
কত দাওয়াতকর্মী স্ত্রীর কারণে পিছনে পড়ে গেল এবং কত যুবক নিজ মাতার প্রশিক্ষণ ও লালন পালন জনিত ত্রুটির কারণে ধ্বংস হয়ে গেল। মুসলিমের জীবন হয়ত অগ্রবর্তিতা নতুবা পশ্চাদ্বর্তিতা।
আলাহ বলেনঃ
তােমাদের মধ্যে যে অগ্রসর হতে চায় কিংবা পিছিয়ে পড়তে চায়, তার জন্যে। (সূরা মুদ্দাচ্ছির : ৩৭)
এ আয়াত আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছে যে, নারী যদি পুরুষকে কল্যাণের পথে এগিয়ে না দেয়, তাহলে অবশ্যই সে পিছিয়ে পড়বে। যদিও সে ধারণা করে বা নারী দাবী করে যে, তারা কল্যাণের উপরই আছে, কারণ তারা অকল্যাণ ও অন্যায়-অপরাধ হতে দূরে আছে। সুতরাং মানুষকে কল্যাণের প্রতি আহ্বান করা এমনই এক কাজ যা না করে নিস্তার নেই এবং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর সামর্থ অনুযায়ী অপরিহার্য।
আলাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
হে মুমিনগণ! তােমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের কেউ কেউ তােমাদের শত্রু। অতএব তাদের সম্পর্কে তােমরা সতর্ক থেক। (সূরা তাগাবুন : ১৪)
এ আয়াত থেকেও আরও জোরাল হচ্ছে যে, স্ত্রীরা যদি কল্যাণের পথে স্বামীদের এগিয়ে দেয় তাহলে অবশ্যই তারা অন্যায়-অপরাধে তাদের সহযােগী হবে। অনুরূপভাবে ভাল কাজে একে অপরের সহযােগী না হলে পরস্পর অন্যায়ের সহকর্মী হবে।
যেমন করে পুরুষের ক্ষেত্রে তার সন্তান ও স্ত্রী কখনাে কখনাে শত্রুতে পরিণত হয় অনুরূপভাবে নারীর ক্ষেত্রেও তার স্বামী ও সন্তান শত্রু হয়ে থাকে, কারণ -তােমাদের সঙ্গীদের কেউ কেউ- এর ব্যাপকতায় নারী-পুরুষ উভয়ে অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল কুরআনের রীতিতে প্রত্যেক আয়াতেই পুরুষ সূচক সম্বােধনে নারীও অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। আল্লাহই ভাল জানেন। (তাফসীরে কুরতুবী-১৮/১৪২)
সুতরাং ইসলামের সুবিশাল কর্ম পরিসরে মহিলাদের অংশগ্রহণ কল্যাণের প্রতি ধাবমানকারী নাও যদি হয় তবে অবশ্যই অকল্যাণ ও অন্যায়ের প্রতিবন্ধক হবে।
উপসংহারে বলবঃ
দাওয়াতী অভিযানে নারীদের অংশ গ্রহণ অতীব জরুরী। এতে অবহেলা ও অমনযােগীতার কোন সুযােগ নেই । ঐশী আহ্বান এক্ষেত্রে সকলের জন্যে সমভাবে প্রযােজ্য।
ইরশাদ হচ্ছেঃ
অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেন, আমি তােমাদের মধ্যে নেক আমলকারী কোন নর অথবা নারীর আমল বিফল করি না... (সূরা আলে ইমরান : ১৯৫)
পোস্টটি যে কোন সোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াব এর অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না" [সহিঃ মুসলিম- ২৬৭৪]
