ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল পালন । বিড়াল পালনের বিধান
ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল পালন করা নিয়ে আমি "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। আমরা আজকে বিড়াল পালনের বিধান সম্পর্কে জানব।
পোষা প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিড়ালের মাঝে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন- যার কারণে এমন সুন্দর একটি মাখলুক আমাদের রোজকার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়াল পছন্দ করতেন এবং বিড়াল পালন করার কারণে তিনি তাঁর প্রিয় এক সাহাবীর ডাক নাম দিয়েছেন আবু হুরাইরা। যার শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় বিড়ালের বাবা।
বিড়াল সৃষ্টির ইতিহাস
গবেষণায় জানা যায়, আজ থেকে ৮ হাজার বছর পূর্বে জঙ্গলের বিড়ালরা খাবারের খোঁজে জনবসতিতে আসতে শুরু করে। সে সময় জমিতে ইঁদুরের অত্যধিক উৎপাত ছিল। সেসব ইঁদুরকে তারা করতে করতেই একসময় বিড়ালরা মানুষের বসতিতে এসে পৌঁছায়। ওই সময়ে জমিতে থাকা ইঁদুরগুলো বিড়ালের প্রিয় খাদ্য হওয়ার পাশাপাশি মানুষের জন্যেও একটি বড় সমস্যার কারণ ছিল। বিড়াল সেগুলোকে মেরে ফেলায় তৎকালীন সময়েই মানুষ আর বিড়ালের মাঝে একটা সখ্যতা গড়ে ওঠে। এবং আস্তে আস্তে তারা একে অপরের আরো আপন হতে শুরু করে।
বিড়াল পালনের বিধান
বর্তমান বিশ্বে পোষা প্রাণীর তালিকায় বিড়াল এক নম্বরে অবস্থান করছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মারা যায়। মহিলাটি এই কারণে জাহান্নামে গেল, কেননা সে বিড়ালটিকে খানা-পিনা কিছুই করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "বিড়াল সর্বদা নাপাক বস্তু হতে দূরে থাকার চেষ্টা করে। বিড়াল হচ্ছে এমন এক প্রাণী যে কিনা মানুষের আশেপাশে ঘুরতে পছন্দ করে।" (সহি বুখারী, হাদিস নং- ৩৪৮২)
বিড়াল এর উপকারিতা
বিড়াল সংক্রমণ সক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের। বাচ্চারা যখন বেড়ে ওঠে তখন তাদের চারপাশে একটি বিড়াল থাকলে সেটা তাদের সংক্রমণ সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। বড় হলে তাদের নানা ধরনের ইনফেকশন কম হয়। অন্যান্য শিশুদের চেয়ে তাদের এলার্জি কিংবা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা কম হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাচ্চারা বিড়ালের সঙ্গে বড় হয় তারা তুলনামূলক ভাবে অন্য বাচ্চাদের চেয়ে বেশি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।
আপনার মুড ভালো রাখার ক্ষেত্রেও পোষা বিড়াল এর ভূমিকা রয়েছে। কখনো যদি খারাপ বোধ করেন, আপনার বিড়ালের সঙ্গে খেলা করুন। তার যত্ন নিন। এর মাধ্যমে আপনার শরীরে সেরোটোনিন নির্গত হবে। সেরোটোনিন হলো এক ধরনের রাসায়নিক- যা উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। বিড়াল মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। কারণ বিড়াল আপনার শরীরের কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। কর্টিসোল হল এক ধরনের রাসায়নিক- যা মানসিক চাপে থাকলে নির্গত হয়। এর মাত্রা যখন কম থাকবে তখন আপনি ভালো বোধ করবেন। অপেক্ষাকৃত কম চাপ বোধ করবেন।
আপনার চারপাশের যদি একটি বিড়াল থাকে, তাহলে শরীর থেকে অক্সিটোসিন' নির্গত হবে। অক্সিটোসিন হরমোন ভালবাসা এবং বিশ্বাস উদ্দীপ্ত করে। যখন আপনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন তখন বিড়ালের সঙ্গে ইশারায় কথা বলুন। এসময় প্রিয় পোষা বিড়ালের সঙ্গ আপনাকে মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত করবে।
এটা সবারই জানা কথা যে, শরীরে উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেটা হতে পারে মারাত্মক কিংবা ছোট মাত্রার। তবে বিড়াল পোষার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানো যায়। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কমে যায়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা বিড়াল পোষার মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের পোষা বিড়াল রয়েছে তাদের উচ্চ রক্তচাপ নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের, এমনকি সাধারণ জীবন যাপন করা ব্যক্তিদের চেয়ে তুলনামূলক কম।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল পালন
আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালের সাথে অত্যন্ত ভালো আচরণ করতেন। তাই আমাদের উচিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে চলা এবং বিড়াল সহ নিরীহ প্রাণীর সাথে সুন্দর আচরণ করা।
পোস্টটি যে কোন সোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াব এর অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না" [সহিঃ মুসলিম- ২৬৭৪]
