প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) এর জীবনী | হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টি
হযরত আদম (আঃ) এর জীবনী নিয়ে আমি "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। আমরা আজকে আদম (আঃ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে জানব।
সৃষ্টির সূচনা
প্রথমে আল্লাহ ছিলেন আল্লাহ ব্যতীত আর কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। এমন কোন মুহূর্ত ছিল না, যখন তিনি ছিলেন না। তিনি ব্যতীত কোন বাস্তবতা ছিলনা। কোন এক পর্যায়ে অসীম জ্ঞান এর মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি সৃষ্টি করবেন। একে একে সম্ভাবনার জগত থেকে বাস্তবতার জগতে নিয়ে আসতে লাগলেন তার প্রথম সৃষ্টিগুলোকে। যেহেতু অসীম জ্ঞানের মালিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৃষ্টি বলে কিছু থাকবে, তারমানে সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাটাই শ্রেয়। সেই সৃষ্টি ভালো কিছুই করুক বা খারাপ কিছু।
আল্লাহ তায়ালা তার আরশ সৃষ্টি করলেন, পানি সৃষ্টি করলেন, কলম সৃষ্টি করলেন এবং সেই কলমকে আদেশ করলেন, লেখ। কলম বলে উঠলো, আমার রব! আমি কি লিখবো? আল্লাহ বললেনঃ সময় শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছু লিখ।
আরশ শব্দের অর্থ আসন। আসন, পানি, কলম এই শব্দগুলোর অর্থ আমরা জানি। কিন্তু আল্লাহর সেই আরশ, সময়ের শুরুর সেই পানি এবং সবকিছুর নিয়োগে লেখা সে কলম কেমন? তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় এবং একমাত্র আল্লাহর কাছেই পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।
মহাবিশ্ব তৈরির ৫০ হাজার বছর আগে আল্লাহর হুকুমে সেই কলম সবকিছুরই নিয়তি লিখে রেখেছিল। ৫০ হাজার বছর পর আল্লাহ আসমান যমীন সৃষ্টি করলেন। অতঃপর কোন এক পর্যায়ে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন ফেরেশতাদের। নূর থেকে তৈরি আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি প্রবৃত্তিগতভাবে আল্লাহর ইবাদতে নিমজ্জিত থাকেন। এবং আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য করে না এবং তাদের মধ্যে থেকে সর্বপ্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন জিবরাঈল (আ)।
জ্বীন জাতির সৃষ্টি এবং ধ্বংস
আল্লাহ নূর থেকে ফেরেশতা তৈরি করার পর, আরও কিছু সময় পার হলো এবং এরপর এক
নতুন জাতি সৃষ্টি করলেন এবং তাদের সৃষ্টি করলেন এক ধরনের ধোঁয়াবিহীন আগুন
থেকে। এই জাতির নাম হল জ্বীন। ফেরেশতা আর জ্বীনদের মধ্যে মূল পার্থক্য হল:
জ্বীন জাতি প্রবৃত্তিগতভাবে আল্লাহর ইবাদত করে না। বরং তারা চাইলে তার হুকুম
অমান্য করতে পারে।
আল্লাহ জ্বীনদের দুনিয়াতে খালিফা হিসেবে পাঠালেন। আগুন
থেকে তৈরি এই সৃষ্টি ছিল উত্তেজনা প্রবণ। তারা ঘন ঘন যুদ্ধ ও খুনাখুনিতে লিপ্ত
হতে লাগল এবং দুনিয়াতে অন্যায়-অনাচার ছড়িয়ে পড়লো। কিছু পূণ্যবান জ্বীন
থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ জ্বীন আল্লাহকে অমান্য করতে লাগলো।
কিন্তু একজন জ্বীন ছিল যে বিশেষভাবে আল্লাহর এবাদত করত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করত। এক পর্যায়ে তার ইবাদতের পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তাকে তার এতটা কাছে আসার অনুমতি দিলেন যে সে ফেরেশতাদের অবস্থানে গিয়ে আল্লাহর এবাদত করার সুযোগ পেলো। অন্যদিকে দুনিয়াতে জ্বীন জাতির অপকর্ম চলতে থাকায়, আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন দুনিয়াতে গিয়ে সেই জ্বীনদের বিতাড়িত করার জন্য। এই দায়িত্ব পালন করার জন্য ফেরেশতাদের সাথে পাঠানো হলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করা সেই জ্বীনকেও। দুনিয়ায় অন্যায়-অনাচার সৃষ্টিকারী জ্বীনদের ফেরেশতারা ধ্বংস করল এবং খুব অল্পসংখ্যক জ্বীন রেহাই পেল। আল্লাহর হুকুম পালন করে ফেরেশতারা আসমানে ফিরে আসলো এবং তাদের সাথে সেই পুণ্যবান জ্বীন।
আদম (আ) এর সৃষ্টি এবং ইবলিশের শয়তান হওয়ার কারণ
এরপর কতটুকু সময় পার হল তা আমরা জানিনা। কিন্তু একপর্যায়ে রব্বুল আলামীন ঘোষণা দিলেন তিনি এক নতুন জীব সৃষ্টি করবেন। যখন আল্লাহ ঘোষণা দিলেন তিনি মানুষ সৃষ্টি করবেন, ফেরেশতারা অবাক হয়ে যায়। তারা দেখেছিল স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন জ্বীন দুনিয়াতে কত অন্যায় অনাচার করেছিল! তারা জানত মানুষকেও যদি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয় তাহলে তারাও পৃথিবীতে একই রকম অন্যায় অনাচার এ লিপ্ত হবে। তবুও কেন আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করবেন! তারা আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন তুলেছিল না বরং তাদের বিস্ময় প্রকাশ করছিল। আল্লাহ খুব সহজভাবেই বোঝালেন, তার কাছে এমন জ্ঞান রয়েছে যা ফেরেশতাদের কাছে নেই। অর্থাৎ মানুষকে সৃষ্টি করার পর তারা দুনিয়াতে নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হলেও তাদের সৃষ্টি করার পেছনে কারণ রয়েছে। এবং শীঘ্রই সেই কারণগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অতঃপর আল্লাহ নিজ হাতে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে সৃষ্টি
করলেন মাটি থেকে। এবং তার দৈহিক গঠন সম্পন্ন করার পর তার ভেতর রূহ বা আত্মা
ফুঁকে দিলেন। এবং তিনি আদম (আ) কে সবকিছুর নাম শেখালেন।
"আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন। তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন, এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।" (২:৩১)
এবং তিনি ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা করার জন্য। ফেরেশতাদের আসনে তখন সেই পুণ্যবান জ্বীনেরও জায়গা ছিল। সেই আদেশটি তার উপরেও প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু প্রতিটি ফেরেশতা তাৎক্ষণিকভাবে আদম আলাইহিস সালামকে সম্মান স্বরূপ সেজদা করলেও সেই জ্বীন তাকে সিজদা করল না। প্রথমবারের মতো কেউ স্বয়ং আল্লাহর উপস্থিতিতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখালো।"যখন আপনার রব ফেরেশতাদের কে বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদা থেকে অতঃপর যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদা করবে। তখন ফেরেশতারা সকলেই সিজদা করল, ইবলিশ ছাড়া - সে অহংকার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।"(৩৮:৭১-৭৪)
এবং সাথে সাথে তার এতবছরের ইবাদতের উদ্দেশ্য প্রকাশ পেল। সে আল্লাহকে বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা কামনা করেনি, কামনা করেছিল মর্যাদা, সম্মান। আগুনের তৈরী জ্বীন হয়ে ইবাদতের মাধ্যমে নূরের তৈরী ফেরেশতাদের মধ্যে জায়গা করে, সে এতটা অহংকারী হয়ে গিয়েছিল, যে সে মাটির তৈরি আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করাকে ছোট করে দেখলো। সে যে গোটা মহাবিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করার মাধ্যমে সবচেয়ে অপদস্থ অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল তা বুঝতে পারল না।
"তিনি বললেন, আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কি তোমাকে সিজদা করতে বাধা দিল? সে বলল, আমি তার চেয়ে বেশি ভালো আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।"
এবং হয়তো আল্লাহকে অমান্য করার চেয়েও বড় ভুলটা সে তার পরেই করল। সে আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহের ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেল। সে ধরেই নিল সে যে ভুল করেছে এর থেকে আল্লাহ তাকে আর কোনদিনও ক্ষমা করবে না। এবং সেই থেকে তার নাম হয়ে গেল ইবলিশ। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ইবলিশকে বিতাড়িত করলেন।
"তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তুমি রাজিম (বিতাড়িত) আর নিশ্চয় তোমার উপর আমার লানত থাকবে বিচার দিবস পর্যন্ত।"(৩৮:৭৭-৭৮)
ইবলিশের মনে এত প্রবল হিংসা আর ক্রোধ জন্ম নিল যে সেই অভিশাপের মুহূর্তেও সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে ফেলল। কিন্তু সে মাগফেরাতের জন্য দোয়া করল না বরং আল্লাহর কাছ থেকেই কিছু সময় রেহাই চাইল। যেন সে আল্লাহর কাছে প্রমাণ করতে পারে মানব জাতি কতটা খারাপ। এবং মহান রব্বুল আলামিন এত বেশি দয়াশীল, তাঁর সৃষ্টিকে তিনি এতটাই ভালোবাসেন যে, তার সরাসরি হুকুম অমান্য করার পর ইবলিশ যখন তার কাছে এই দোয়া করল তিনি তার দোয়া কবুল করে নিলেন।
তাহলে আমরা যখন ভুল করে ফেলি, বার বার একই গুনায় লিপ্ত হতে থাকি এবং এরপর মনে করি আমরা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছি আল্লাহ হয়তো আমাদের ক্ষমা করবেন না। আমাদের কি এমন চিন্তা করার কোনো কারণ রয়েছে? আল্লাহ আদম (আ) কে জান্নাতে প্রবেশ করালেন। এবং তিনি সেখানে তার রবের নেয়ামত উপভোগ করতে লাগলেন। এবং ইবলিশ গোপনে তাকে ধোঁকা দেয়ার পরিকল্পনা করতে লাগলো।
ইবলিশ যখন বছরের-পর-বছর আল্লাহর ইবাদত করার পর ইবাদতকারীদের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত অবস্থানে পৌঁছে যায়, যখন সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সুযোগ পায়, যা শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ফেরেশতারাই পেয়েছিল তখন আল্লাহ তাকে আরো একটি বিশেষ ইবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাকে বলেছিলেন আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করতে। কিন্তু সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করল। আল্লাহর আদেশ অমান্য করার মাধ্যমে তার এত বছরের এবাদত এর একটি দিক প্রকাশ পেল। তার এত বছরের ইবাদত জুড়েই ছিল আরো মর্যাদা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। নিজের মাহাত্ম্য প্রমাণের আকাঙ্ক্ষা।
আল্লাহ যেহেতু "লাতিফুল খাবির"। তিনি প্রতিটি অন্তরের সবচেয়ে গোপন বিষয়গুলো সম্পর্কেও অবগত। তাই তিনি সবসময়ই জানতেন ইবলিশের ইবাদতের গভীরে কেমন উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু তিনি তো "আরহামুর রাহিমীন"। তাই তিনি ইবলিশ কে ধীরে ধীরে তার কাছে টেনে নিয়েছেন। তাকে শ্রেষ্ঠতর সঙ্গীদের সাথে তার রবের এবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু তার অন্তরের অহংবোধ এত প্রবল ছিল যে সৃষ্টির সেরা ইবাদতকারীদের সঙ্গ পেয়েও তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
অতঃপর আল্লাহ তাঁর সামনে এমন এক পরীক্ষা দিলেন যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল তার অন্তরে আসলে কি ছিল। যে সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে ভালোবেসেছে, একনিষ্ঠভাবে তাঁরই নৈকট্য লাভ করার জন্য ইবাদত করেছে, সে আল্লাহর হুকুম মানার জন্য উৎসুক হয়ে থাকবে আল্লাহ তাকে যে হুকুমই দেন না কেন। ইবলিশ যখন আল্লাহর আদেশ অমান্য করল তখন সবার কাছেই এ ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেল। তার অন্তরে আল্লাহর আনুগত্যের চেয়ে নিজের পদমর্যাদা প্রাধান্য পেয়েছে। এবং সে এতটাই হতভাগা যে সে যেই পদমর্যাদার কামনায় নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিল, সেই পদমর্যাদা একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর আনুগত্য করলে এমনি তার হয়ে যেত। এবং হাজার হাজার বছর পর আজো কত মানুষ সেই একই ধোকার মধ্যে পড়ে রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ সামান্য মাটির তৈরি আদম (আ) কে আল্লাহ নূরের তৈরী ফেরেশতা ও আগুনের তৈরী জ্বীনদের সিজদা করতে বললেন কেন? এর বিভিন্ন কারণের একটি হচ্ছে জ্ঞানের মর্যাদা। আল্লাহ আদম (আ) কে সৃষ্টি করার সাথে সাথেই তাকে সেজদা করার হুকুম দেননি। বরং তিনি প্রথমে তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এবং আদম (আ) সেই শিক্ষা গ্রহণ করার পরই বাকি দের কাছ থেকে সিজদা করার মত অবস্থানে পৌঁছেছেন।
মা হাওয়া (আঃ) এর জন্ম
আল্লাহর রহমতে আদম (আ) জান্নাতে বাস করতে লাগলেন। এবং ইবলিশ নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে ওত পেতে বসে থাকল আদম (আ) কেও ফাঁদে ফেলার জন্য। অন্যদিকে আদম (আ) জান্নাতের অগণিত নিয়ামত উপভোগ করতে লাগলেন। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে যাবার পর তিনি তার অন্তরে এক নতুন ধরনের অনুভূতি আবিষ্কার করলেন। এই অনুভূতি ছিল একাকীত্ব বোধ। তিনি ধীরে ধীরে লক্ষ করলেন আল্লাহর জগতে এত এত ফেরেশতা, এত এত জান্নাতি পশুপাখি কিন্তু তার মত আর কেউ নেই। অতঃপর আল্লাহ তার জন্য একজন জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করলেন। এবং আমাদের মা হাওয়া (আ) এর জন্ম হলো। এবং তাকে পাওয়ার সাথে সাথে আদম (আ) এর নিঃসঙ্গতা দূর হয়ে গেল। এবং আল্লাহ বললেনঃ
"আর তার নিদর্শন গুলোর মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা করে "(৩০:২১)
আদম (আঃ) এবং হাওয়া (আঃ) এর পৃথিবীতে আগমন
আদম (আ) এবং হাওয়া (আ) এর জন্য আল্লাহ পুরো জান্নাত উমোক্ত করে দিলেন এবং শুধুমাত্র একটি গাছের ব্যাপারে তাদের সতর্ক করে দিলেন। এবং বললেন, এই গাছের কাছেও এসো না।
এই আদেশকে ঘিরেই ইবলিশ তার ফাঁদ পাততে লাগল। সে ধাপে ধাপে আদম (আ) কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল। এবং অবশেষে সে আল্লাহর কসম খেয়ে বলল সে তাদের সৎ উপদেশ দিচ্ছে এবং তারা যদি সে গাছের ফল খায় তারা অমর হয়ে যাবেন, ফেরেশতাদের মত হয়ে যাবেন।
আদম (আ) এবং মা হওয়া (আ) এত পবিত্র পরিবেশে জীবনযাপন করেছিলেন যে তারা কখনো মিথ্যে কথার সম্মুখীন হননি। আল্লাহর কসম খেয়ে মিথ্যা কথা বলতো অনেক দূরের কথা। তারা ইবলিশের ফাঁদে পা দিলেন এবং সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। এবং সাথে সাথে তারা তাদের নগ্নতা উপলব্ধি করলেন। এবং যে আলো দ্বারা তাদের নগ্নতা সুরক্ষিত ছিল সে আলো নিভে গেল এবং তারা গাছপালা দিয়ে নিজেদের ঢেকে নিলেন। আদম (আ) এবং মা হওয়া (আ) সাথে সাথে তাদের ভুল বুঝতে পারলেন। যদিও ইবলিশ তাদের ফাসিয়েছিল তারা বুঝতে পারলেন যখন আল্লাহ পরিষ্কার আদেশ করেছিলেন তাদেরকে সেই গাছের ফল না খাওয়ার জন্য তখন তাদের ইবলিসের কথায় কান দেয়া উচিত হয়নি। এবং তাই এতে তাদেরও দোষ ছিল এবং তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করে বললেন,
"হে আমাদের রব আমরা আমাদের নফসের উপর জুলুম করেছি এবং যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের উপর রহম না করেন তবে নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।"
এখানেই আদম (আ) এবং ইবলিশের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। যখন ইবলিস আল্লাহর সরাসরি আদেশ অমান্য করেছিল সে আল্লাহকেই দোষারোপ করেছিল। নাউজবিল্লাহ। সে বলেছিল নিশ্চয়ই আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন। অতএব আমি মানুষকে পথভ্রষ্ট করব। অন্যদিকে আদম (আ) নিজের ভুলের দায়ভার পুরোপুরি নিজের কাঁধেই নিয়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে বলেছিলেন আল্লাহ যদি তাকে ক্ষমা না করেন তার আর কোন আশা থাকবেনা, তার আর কোন উপায় থাকবেনা। এবং আল্লাহ আদম (আ) এবং মা হওয়া (আ) এর দোয়া কবুল করলেন। কিন্তু তাদেরকে এও আদেশ করলেন যেহেতু তারা সেই গাছের ফল খেয়েছিল ফলে তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সময় পৃথিবীতে কাটাতে হবে।
মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে আল্লাহ তাআলা আদম আলাই সাল্লাম কে শুক্রবারে সৃষ্টি করেছেন। তাকে শুক্রবারে জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। আর শুক্রবারেই তাকে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছিল।
আদম আলাই সাল্লাম এবং মা হাওয়া পৃথিবীর দুটি আলাদা স্থানে অবতীর্ণ হলেন। তারা ঠিক কোথায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন সে বিষয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে সব বর্ণনায় যা আসে তা হল তারা দুজন পৃথক পৃথক জায়গায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। জান্নাতের মতো জায়গায় একে অপরের মধুর সঙ্গ পাওয়ার পর দুনিয়ার মতো জায়গায় এসে নিঃসঙ্গ দিন কাটানো অনেক বড় একটা পরীক্ষা ছিল। তারা ব্যাকুল হয়ে একে অপরকে খুঁজতে লাগলেন। খুঁজতে খুঁজতে কতদিন পার হয়ে গেল তার কোন নির্দিষ্ট হিসাব নেই। কিন্তু অবশেষে তারা একে অপরকে খুঁজে পেলেন এবং মা হাওয়া এবং আদম (আ) তাদের দুনিয়া জীবনের সংসার শুরু করলেন।
বিয়ের সুচনা এবং পৃথিবীতে মানব জাতির সুচনা
বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে আদম আলাই সাল্লাম দুনিয়াতে প্রায় এক হাজার বছর বেঁচে ছিলেন। এবং এই সময়ে মা হওয়া অনেকবার মা হয়েছিলেন এবং প্রত্যেকবার তার কোলে আল্লাহর হুকুমে জমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। এবং সেই সময়ে বিধান ছিল এক কোলের সন্তানকে আরেক কোলের সন্তানের সাথে বিয়ে করতে হবে। অর্থাৎ যেহেতু তখন প্রতিটি মানুষই সরাসরি একে অপরের ভাই বোন ছিল তাই তখন ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে করার নিষেধাজ্ঞা জমজ ভাই বোনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম হত্যাকারী এবং সর্বপ্রথম শহীদ
আদম (আ) এর প্রথম পুত্র সন্তানের নাম ছিল কাবিল এবং এরপরের পুত্র সন্তানের নাম ছিল হাবিল। কাবিল ছিল কৃষক আর হাবিল পশুপাখি পালতো। কাবিল ছিল কিছুটা রাগী প্রকৃতির এবং সে হাবিলের বোনকে বিয়ে করার ব্যাপারে অসম্মতি জানালো। তার দৃষ্টিতে তার নিজের বোন ছিল আরো বেশি রূপবতী। এই অবস্থায় আদম (আ) এর মাধ্যমে ওহী আসলো তারা দুই ভাই যেন আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করে এবং যার কোরবানি কবুল হবে তার পছন্দই চূড়ান্ত হবে।
হাবিল তার খামার থেকে সবচেয়ে সুন্দর পশুটি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করল। অন্যদিকে কাবিল তার সবচেয়ে খারাপ ফসলটি কোরবানির নিয়তে উঠিয়ে রাখল। এবং আল্লাহ হাবিলের কোরবানি কবুল করলেন। আর কাবিলের কুরবানী কবুল হলো না। হাবিল আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী কাবিলের বোনকে বিয়ে করার জন্য সম্মতি জানাল। কিন্তু এতে কাবিলের অন্তর হিংসা-বিদ্বেষে ভরে গেল এবং সে একপর্যায়ে হাবিল কে বলল, সে হাবিলকে হত্যা করে ফেলবে। হাবিল তার ভাইকে বলল, তুমি আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়ালেও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য হাত বাড়াবো না। কারন আমি আল্লাহকে ভয় করি। এবং তার কথা শুনে কাবিল আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলো এবং হাবিলকে হত্যা করার জন্য তার গলা চেপে ধরল। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারলো না।
তখন ইবলিস তাদের কাছে আসলো। এবং হাবিলকে হত্যা করার পদ্ধতি শেখানোর জন্য একটি পশুর মাথায় পাথর দিয়ে পশুটিকে হত্যা করল। এবং কাবিল একইভাবে একটি পাথর নিয়ে হাবিলের মাথায় আঘাত করল। এবং এভাবেই হাবিল হয়ে গেল মানব ইতিহাসের প্রথম শহীদ। আর কাবিল হয়ে গেল মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকারী।
যতক্ষণ পর্যন্ত আদম (আ) এর কাছে খবর এলো ততক্ষণে কাবিল তার কর্মের পরিনাম এর কথা চিন্তা করে পালিয়ে গিয়েছে। সে ভাবল তার আর কোন আশা নেই। আদম (আ) ও মা হাওয়া (আ) তাদের দুই সন্তানকে এভাবে হারিয়ে বুকে গভীর শোক ধারণ করে তাদের বাকি সন্তানদের সৎ উপদেশ দিতে থাকলেন এবং আল্লাহর ইবাদত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে থাকলেন।
ধীরে ধীরে বহু বছর পার হয়ে গেল এবং তাদের অনেক সন্তান জন্ম হলো। কেউ কেউ বলেন মা হাওয়ার বিশ জোড়া জমজ সন্তান হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন সেই সংখ্যা একশোরও বেশি। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই। তবে তাদের সব সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে একজন সন্তান ছিলেন শীষ। যে তার বাবার মত সমাজের মানুষকে ভালো কাজ করার উপদেশ দিতেন এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিতেন।
আদম (আঃ) এর মৃত্যু
আদম (আ) যখন অনেক বৃদ্ধ তখন একদিন তিনি ফল খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। বাস্তবে তার জান্নাতের ফলের কথা খুব মনে পড়ছিল এবং তিনি সেই ফলই খেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তার সন্তানেরা যখন শুনলো তাদের বাবা ফল খেতে চাচ্ছেন তারা দ্রুত বেরিয়ে পড়ল সেই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ফল নিয়ে আসার জন্য। তারা যখন ফলের সন্ধানে জঙ্গলে গেল তখন সেখানে তাদের কিছু ফেরেশতাদের সাথে দেখা হয়। সে ফেরেশতারা বলল তোমাদের বাবা যে ফল চেয়েছেন তা এখানে নেই। তোমরা বরং তার কাছে ফিরে যাও এবং আমরাও তার সাথে সাক্ষাৎ করব।
আদম (আ) এর ছেলেরা যখন সেই ফেরেশতাদের নিয়ে বাড়ি ফিরল তখন মা হওয়া সেই ফেরেশতাদের একজনকে চিনতে পারল। কারণ সেই ফেরেশতা এর আগেও একবার দেখা দিয়েছিল যখন তার ছেলে হাবিল কে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বুঝতে পারলেন মালাকুল মাউত তার স্বামীর আত্মাকে নিতে এসেছে। জান্নাতে বহুবছর সুখে-শান্তিতে কাটানোর পর যখন তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল তখন যে সময়টা মা হওয়া আদম (আ) কে ছাড়া একাকী কাটিয়েছিলেন, সেই কষ্টকর সময়ের কথা তার মনে পড়ে গেল। এবং তিনি মালাকুল মউত কে বাধা দিলেন। কিন্তু আদম (আ) মা হাওয়া কে বুঝিয়ে বললেন তাকে তার রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। অবশেষে মা হওয়া সরে দাঁড়ালেন। এবং মালাকুল মাওত আদম (আ) এর আত্মা নিয়ে নিলেন। তারা আদম (আ) এর মরদেহ কে গোসল করালেন, দাফন করলেন এবং মাটিতে কবর দিলেন। এবং সেই প্রথা আমরা আজ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।
আদম (আ) এর মৃত্যুর সময় মানব সমাজ অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছিল এবং সেখানে ভাল কাজের পাশাপাশি নানা ধরনের পাপ কাজ বাড়তে লাগল। এবং এই অবস্থায় আল্লাহর বাণী প্রচার করার কাজে নামলেন আদম (আ) এর সন্তান শীষ (আ)।
পরবর্তী পর্বে থাকছে হযরত শীষ (আঃ) এর জীবনী।
-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%80---%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%AE-(%E0%A6%86%E0%A6%83)-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%83%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF.webp)
Nice post
Google Adsense Approval Only 8 Post Without Trick
Only 1 Month Of Blogger Google AdSense Approval
how to disable right click on blogger
How Create Html table responsive blogger
How to Add Google Analytics to Blogger
Suspense24