কিভাবে বুঝবেন আল্লাহ আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট
কিভাবে বুঝবেন আল্লাহ আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট এই নিয়ে আমি "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে হাদিস ও কোরআন থেকে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। আমরা আজকে আল্লাহ কখন আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন সে সম্পর্কে জানব। ইনশাআল্লাহ।
বান্দার প্রতি তাঁর সৃষ্টি কর্তা যদি অসন্তুষ্ট থাকেন তাহলে তার ক্ষতি অনিবার্য। একজন মানুষ কিভাবে অনুভব করবে যে তার প্রভু তার প্রতি অসন্তুষ্ট! কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে এ কথা বলা যাবে না যে, আল্লাহ তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট অথবা আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন না। কারণ এ ব্যাপারে প্রকৃত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর। তবে কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু নিদর্শন এসেছে যার দ্বারা মানুষের প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ বোঝা যায়।
আল্লাহ যখন কোন বান্দার উপর রাগান্বিত হন তখন তার অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন। একদিন রাসূল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে বললেন,
হে আয়েশা! তুমি কখনো আমাকে অশালীন আচরণ করতে দেখেছো? কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার অনিষ্টের কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে। (সহি বুখারী, হাদিস ৬০৩২)
আল্লাহ তাআলা যখন কারোর প্রতি অসন্তুষ্ট হন তখন তার জীবন থেকে বরকত উঠিয়ে নেন। এবং তার ওপর বিভিন্ন ধরনের শত্রু নিয়োজিত করে দেন।
সূরা আনকাবুতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
"আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি পাথরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে আঘাত হেনেছে বজ্রপাত, কাউকে বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেননি বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে।" (সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪০)
আল্লাহ আমাদের অনেক কর্মকান্ডের মাধ্যমেই অসন্তুষ্ট হন। প্রথমত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করা। আল্লাহ তাআলা চান বান্দা যেন তার কাছে প্রার্থনা করে।
সূরা গাফিরে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
"আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।" (সূরা গাফির, আয়াত ৬০)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে যে ব্যক্তি প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তাআলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন। (তিরমিজি, হাদিস ৩৩৭৩) অর্থাৎ আমাদের প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টির প্রথম কারণ আমরা আল্লাহর ইবাদত না করা।
আল্লাহর অসন্তুষ্টির দ্বিতীয় কারণঃ অহংকারী হওয়া এবং সত্যকে গোপন করা। অন্যকে ছোট করার মানসিকতা থাকা, মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধিলাভ করার প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা থাকা। যার ফলে সে ভালো কাজ করে লোক দেখানো ও খ্যাতি লাভের জন্য। তার চাওয়া পাওয়া একমাত্র তার প্রবৃত্তিকে পূরণ করা। তার প্রবৃত্তি তার প্রভু হয়ে যায়। পরকাল বিষয়ে সে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে।
"নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।" (সূরা নাহল, আয়াত ২৩)
তৃতীয়তঃ নিয়ামত অস্বীকার করা। প্রতিটি বান্দার উপর দিনরাত 24 ঘন্টা আল্লাহ তাআলার হাজারো নিয়ামত বর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু যারা অকৃতজ্ঞ তারা আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত পেয়েও তা অস্বীকার করে। আল্লাহ তাআলা তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন।
সূরা আয-জুমারে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
"যদি তোমরা অস্বীকার করো তাহলে আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তার বান্দাদের কাফির হয়ে পড়া পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন।" (সূরা জুমার, আয়াত ৭)
চতুর্থ কারণ, আমানতের খিয়ানত করা। কথা ও কাজে যখন আমরা আমানতের খেয়ানত করি তখন আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। অথচ আমরা আমাদের জীবনে খেয়ানত করেই চলেছি।
সূরা নিসায় আল্লাহ সুবাহানাতালা বলেন,
"আর যারা নিজেদের সঙ্গেই খেয়ানত করে তুমি তাদের পক্ষে বিতর্ক করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো খেয়ানতকারী ও পাপিষ্ঠ কে পছন্দ করেন না।"
আল্লাহর অসন্তুষ্টি পঞ্চম কারণ, সীমালংঘন করা। যেকোনো কাজে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত। কোনো ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি না করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
"আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো কিন্তু সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।" (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, বাড়াবাড়ি করো না। সকাল-সন্ধ্যায় এবং রাতের কিছু অংশেও ইবাদতের জন্য বের হয়ে পড়ো। যদি তোমরা অবশ্যই সবকিছুর মাত্র রক্ষা করো তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। (সহি বুখারী, হাদিস ৬৪৬৩)
মহান আল্লাহ তাআলা তিনি তার বিশেষ বান্দাদের দুনিয়া ও আখিরাতে প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য নিয়ামত তাদের উপর পরিপূর্ণ করে দেন আর তাদেরকে সেসব মানুষের অন্তর্ভুক্ত করেন, যাদেরকে নিয়ামত দান করা হলে তারা শুকরিয়া আদায় করে। আল্লাহ যখন বিপদ আপদ দেন, তখন ধৈর্য ধারণ করে। এবং তাদের মাধ্যমে কোন পাপ হয়ে গেলে, তারা ইস্তেগফার করে।
এই তিনটি বিষয় সৌভাগ্যের নিদর্শন এবং এগুলো দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার আলামত। এই তিনটি বিষয় আয়ত্ত করতে পারলেই আমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ এবং তার প্রিয় বান্দা হতে পারি, ইনশাআল্লাহ।
পোস্টটি যে কোন সোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াব এর অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না" [সহিঃ মুসলিম- ২৬৭৪]
