ভগবান তো মুদির দোকানে! - সত্য ঘটনা অবলম্বে
ভগবান তো মুদির দোকানে! - সত্য ঘটনা অবলম্বে এই ঘটনা নিয়ে আমি "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। আমরা আজকে নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবারের ইসলাম গ্রহণ করার গল্প সম্পর্কে জানব।
১৯৮৬ সাল। সুমন মিস্ত্রি। স্ত্রী নিতা বালা আর ১১ বছর বয়সী ছেলে রাজন। নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবার। নিম্নবিত্তও বটে। দিন আনে দিন খায়। সামান্য ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে কোন রকম সংসার চলে। কোনদিন কাজ থাকে, কোনদিন থাকেনা। যেদিন কাজ থাকে সেদিনের হাজিরাও আবার নিশ্চিত নয়। হাজিরার টাকা পেলে রফিক হাজীর দোকান থেকে নগদ টাকায় বাজার-সদাই করা হয়। হাজিরা না পেলে বাকিতে সদাই নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। হাজী সাহেব নিতান্ত ভাল মানুষ বলেই এরকম অনিশ্চিত একজন লোককে বাকিতে সদাই দেন।
অভাবের সংসারে শখ আহ্লাদের বলি চড়িয়ে কেটে যাচ্ছিল জীবনের দিনগুলো। বিপত্তি বাঁধল হঠাৎ এক মৌসুমি জ্বরে। জ্বরে কাতর সুমন মিস্ত্রি দুদিন হল বিছানায় শোয়া। চিকিৎসা বলতে সরকারি হাসপাতালের প্যারাসিটামল আর বউয়ের সেবা যত্ন। কাজ বন্ধ, রোজগার বন্ধ, বন্ধ বাজার সদাই। তিন দিনের মাথায় উনুনে চাপানোর মতো ঘরে আর কিছুই নেই। স্বামী বেঘোর জ্বরে বেখবর। নীতা বালার কপালে দুশ্চিন্তার ঘাম জমতে শুরু করেছে।
"আজ কি হবে? পাতে কি কিছু পড়বে? এই অসুস্থ মানুষটা আর বাচ্চা ছেলেটা না খেয়ে থাকবে?"
সাত-পাঁচ ভেবে চুলার পাড়ের তাক থেকে পুরনো বয়মটা নামালো নীতা। ভিতরে উঁকি মেরে খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যাক পঞ্চাশ টাকার একটা পুরনো নোট দেখা যাচ্ছে। আজকের দিনটা পার করে দেওয়া যাবে। অতি যত্নে নোটটা বের করে ছেলেটাকে ডাকল। রাজন আসতেই স্কুলের কড়া শিক্ষিকার মত নীতা ছেলেকে বুঝাতে লাগল, এই পঞ্চাশ টাকা প্যান্টের পকেটে ভর। পকেটে ভরে পকেটে হাত দিয়ে রাখবি। রফিক হাজির দোকানে ঢোকার আগে কিন্তু হাত বের করবি না। দোকানে ঢুকে টাকাটা হাজী সাহেবকে দিবি। এক কেজি চাউল আর এক পোয়া ডাল নিয়ে সোজা বাড়িতে এসে পড়বি। এদিক ওদিক কোন দিক কিন্তু যাবি না।
ছেলে মাথা নেড়ে মায়ের কথায় সায় দিয়ে টাকা নিয়ে ছুটল। হাজী সাহেবের দোকানে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, এক কেজি চাউল আর এক পোয়া ডাল দেন। রফিক হাজি রাজনের দিকে তাকিয়েই বুঝলেন, কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে। তিনি টাকা না নিয়ে প্রশ্ন করলেন, "তোমার বাবা কোথায়? তাকে দেখি না তিনদিন যাবত। ঘটনা কি?" রাজন বলল, বাবা বিছানায় পড়ে আছে। তিন দিন যাবত জ্বর। মা পাঠিয়েছে এই টাকা দিয়ে সদাই নিতে।
হাজী রফিক দ্বীনদার মানুষ। দ্বীনের মেহনত ও ফিকির নিয়ে চলা মানুষ। সব শুনে তিনি মিনিটখানেক চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন। সামনে সুমন মিস্ত্রির ছেলে রাজন পুরনো পঞ্চাশ টাকার নোট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খানিকপর হাজী সাহেব চোখ খুলে দোকানের কর্মচারী নবু মিয়াকে ডাকলেন,- নবু! একটা টুকরি নাও। দশ কেজি চাউল, দুই লিটার তেল আর এটা এটা নাও। নবু মিয়া টুকরিতে সব জমা করল। হাজী সাহেব ক্যাশ থেকে ১৫০ টাকা বের করে নবুর হতে দিয়ে বললেন, এই টাকা দিয়ে কিছু মাছ কিনে নিয়ে এসো। নবু বেড়িয়ে গেল।
রাজন আবার বলল, আমার চাউল আর ডাল দিবেন না? হাজী সাহেব বললেন, আরে বাবা দেব। এত তাড়াহুড়া কিসের? মাত্র সকাল ৯ টা বাজে। তোমার মা কি এখনি রান্না করবে? রাজন বলল, না, এখন রান্না করবে না। তবে মা চিন্তা করবে। হাজী সাহেব বললেন, চিন্তা করবে না। তুমি বস। আইসক্রিম খাবে? একটা আইসক্রিম এনে দেই?
রাজন ভয়, লোভ আর বিস্ময়মাখা চোখে হাজী রফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইল। হাজী সাহেব আইসক্রিম এনে দিলেন। ইতিমধ্যে নবু মিয়া মাছ নিয়ে হাজির। হাজী সাহেব নবুর হতে আরো ২০০ টাকা দিয়ে বললেন, এই বাজার সদাই নিয়ে এই ছেলের সঙ্গে গিয়ে বাড়িতে দিয়ে এসো। বাড়ির দরজায় মাল নামিয়ে দিয়ে ২০০ টাকা ছেলেটার হতে দিয়ে তুমি এসে পড়বে।
রাজন চোখ বড় বড় করে একবার হাজী সাহেবের দিকে দেখে, একবার বাজার সদাইয়ের দিকে দেখে। হাজী সাহেব ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে বললেন, ওর সঙ্গে বাড়িতে যাও। বাজার আর টাকা তোমার মাকে দিবে। আর তোমার বাবাকে বলবে, ভালো হলে আমার সাথে দেখা করতে।
নবু মিয়া বাড়ির দরজায় সব নামিয়ে দিয়ে দুইশ টাকা রাজন এর হতে গুঁজে দিয়ে চলে এলো। রাজন চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগল নীতা বালা বেরিয়ে এসে এতো বাজার সদাই দেখে হকচকিয়ে গেল। নিজেকে খানিকটা সামলে বলল, এগুলি কি? এগুলো কোথা থেকে এনেছিস তুই? রাজন বলল, হাজী সাহেব পাঠিয়েছে। বাবার অসুখ শুনে দোকানের লোক দিয়ে এগুলো পাঠিয়েছে। তোমার পঞ্চাশ টাকা নেয় নি, আরো দুইশ টাকা দিয়েছে। বাবা ভালো হলে দেখা করতে বলেছে। আমাকে একটা আইসক্রিমও খাইয়েছে।
সব শুনে নীতা বালা দরজাতেই কিছুক্ষণ খুঁটির মত দাঁড়িয়ে রইল। চিন্তার জগত এলোমেলো হয়ে গেছে তার। চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে। খানিকটা ধাতস্ত হয়ে সবকিছু ভেতরে নিয়ে এসে স্বামীর কাছে গিয়ে বসলো। ধরে আসা গলায় বলল, সারা জীবন যাকে ডেকেছি সেই ভগবান তো মন্দিরে নেই। ভগবান তো মুদির দোকানে! বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। এ কান্না যেন সহজে থামবার নয়।
সপ্তাহখানেক পর। হাজী রফিক সাহেবের বাসায় ইসলামের অমিয় সুধা পানকারী তিনজন মানুষ নতুন নাম পেল। আব্দুল্লাহ, আমিনা ও মুহাম্মাদ।
(সত্য ঘটনা অবলম্বে, ১৯৮৯ সালে ইসলাম গ্রহণকারী জনৈক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ভাইয়ের জবানে শোনা। নামগুলো কাল্পনিক।)
পোস্টটি যে কোন সোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াব এর অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না" [সহিঃ মুসলিম- ২৬৭৪]
