সিগারেট খাওয়া হারাম নাকি মাকরূহ । সিগারেট খাওয়া হারাম কেন?
সিগারেট খাওয়া হারাম কেন?
সিগারেট খাওয়া হারাম কেন বা সিগারেট খাওয়া হারাম নাকি মাকরূহ আমি এই বিষয়ে "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। সিগারেট খাওয়া হারাম কেন বা সিগারেট খাওয়া হারাম নাকি মাকরূহ এই সম্পর্কে জেনে না থাকলে পোস্টটি সম্পুর্ন পড়ুন। আশা করি উত্তর পেয়ে জাবেন।
সিগারেট খাওয়া হারাম নাকি মাকরূহ?
যে সমস্ত হুজুররা সিগারেট খাওয়া হারাম না বলে “মাকরূহ” বলে তাদের সিগারেট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। সিগারেট খাওয়ার ক্ষতির পরিণাম সম্পর্কে তাদের ধারনা নেই তাই তারা সিগারেট খাওয়া “হারাম” বলে না। এতে দোষটা আসলে তাদের না।
সিগারেট খাওয়ার শারী’ইয়ী হুকুম আছে কি?
কেননা কুরআন ও হাদিসে সিগারেট খাওয়া হারাম কিনা এ সম্পর্কে সরাসরি কোন কথা বলা হয় নি। কিন্তু আমরা হারামের বৈশিষ্ট্য দেখে সিগারেট খাওয়া হারাম বলতে পারি।
প্রথম: ‘তিনি তাদের জন্য হালাল করেন যাবতীয় পবিত্র বস্তু এবং হারাম করেন অপবিত্র বস্তু’ (আল–আ‘রাফ, ৭/১৫৭)। আর ধূমপান হলো একটি ক্ষতিকর, অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় বস্তু।
দ্বিতীয়: ‘নিজের হাতে নিজেদের তোমরা ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না’ (আল-বাক্বারা, ২/১৯৫)।
আরও পড়ুনঃ
সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সিগারেট খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতিগুলো হয়, তা হলো :
১. ‘ফুসফুসের ক্যান্সার, হাঁপানি বা অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ে, শিশুদের হাঁপানি হতে পারে, ফুসফুসের যেসব সংক্রামক রোগ হয় যেমন : টিবি, নিউমোনিয়া সেসবের ঝুঁকি বাড়ে, এমফাইসেমা হয়।
২. হার্টের করোনারি অসুখ, অ্যানজাইমা বা বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, বারবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে, নাড়ীর ছন্দ নষ্ট করতে পারে। ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে প্রদাহ হতে পারে।
৩. অল্প বয়সেই চামড়া কুঁচকে যায়, আঙ্গুলের নখের স্বাভাবিক রঙ নষ্ট হয়ে যায়।
৪. ধূমপানের ফলে মুখ, ফুসফুস, অন্ননালী, শ্বাসনালী, মূত্রাশয়, কিডনী, পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস, কোলন, মলভান্ড, মেয়েদের জরায়ুমুখ ও যোনিদ্বার প্রভৃতির ক্যান্সার হতে পারে।
৫. আর্থাইটিস বা অস্তিসন্ধির প্রদাহ, হাড় ভাঙলে জোড়া লাগতে দেরি হয়, মাংসপেশি ও হাড়ে আঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়, হাড় ভাঙার ঝুঁকিও বাড়ে।
৬. বন্ধ্যাত্ব, যৌন উদ্দীপনা কমে যায় বা হারিয়ে যায়, বীর্য শুক্রাণুর নড়াচড়া বা ঘনত্ব কমে, গর্ভপাত, সময়ের আগে রজোনিবৃত্তি ঘটে। এছাড়াও স্ট্রোক, বিস্মরণ, প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি হয়। ছানি, নাকডাকা, দাঁতের অসুখ, ডিওডেনামের আলসার বা ক্ষত, শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়’।
তৃতীয়: ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না’ (আন-নিসা, ৪/২৯)।
ধূমপান হলো নীরব ঘাতক। এক ধরনের ধীর গতির বিষক্রিয়া। যার ফলে মানুষ নিজে নিজেকেই ধীরে ধীরে হত্যা করে। প্রতিটি কোম্পানির বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে, ‘Cigarette/ smoking injurious to health. অথবা Smoking kills’.
কুরআনে ও সিগারেটের প্যাকেটে একই শব্দ ব্যবহার হয়েছে ‘Kill’; মহান আল্লাহ নিজে ওয়ার্নিং দিচ্ছেন আমাদেরকে যে, তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। আর সিগারেটের প্যাকেট জানান দিচ্ছে যে, সিগারেট হত্যা করে। এখন কেউ যদি জেনে বুঝে তা পান করে, তা হবে আত্মহত্যা করার শামিল।
পরিসংখ্যান বলছে, তামাক সেবনের ফলে বিশ্বে ৮ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। শুধুমাত্র আমেরিকায় সিগারেট খাওয়ার ফলে মারা যায় প্রতিবছর ৪৮ হাজার মানুষ। বিশ্বে প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় সিগারেট খাওয়ার কারণে। পরিসংখ্যান আরও বলছে, একটি সিগারেট ১১ মিনিট করে জীবন কমিয়ে দেয়। আমাদের দেশে প্রতি ঘণ্টায় তামাক সেবনের ফলে মৃত্যু হয় ১৩৭ জনের। আর বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজনের।
চতুর্থ: মদ্যপানের ক্ষতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, এ দুইয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। তবে মানুষের জন্য উপকারও আছে। কিন্তু এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে অনেক বড়’ (আল-বাক্বার, ২/২১৯)।
আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন যে, মদে কিছু উপকার রয়েছে। তবে ক্ষতির ভাগ বেশি। অথচ সিগারেট খাওয়া পুরোটাই ক্ষতিকর। সিগারেট এর কোম্পানিগুলো প্যাকেটে সিগারেট এর উপকারিতা বিষয়ে কিছুই লিখে রাখেনি। উল্টো তারাও উল্লেখ করেছে যে, সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পঞ্চম: ‘আর কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বানী ইসরাঈল, ১৭/২৬-২৭)। এ আয়াত প্রমাণ করছে যে, কোনো সম্পদ অকারণে নষ্ট করা বা অপচয় ও অপব্যয় করা যাবে না।
আর অপব্যয় বা অপচয় হলো, যেখানে খরচ করার মধ্যে দ্বীনের কল্যাণ নেই এবং মানুষের কল্যাণ নেই, সেখানে খরচ করা হলো অপচয়। আর কুরআনের ভাষায় অপচয়কারী হলো শয়তানের ভাই।
যেহেতু, সিগারেট খাওয়ায় কোনো উপকার নেই; বরং তাতে ক্ষতি রয়েছে, তখন এটা আসলে অপচয় ছাড়া কিছু নয়। ব্যাপারটা অনেকটা এইরকম যে, একজন একশ টাকার একটি নোট নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিল। যখন কোনো ধূমপায়ী সিগারেটে আগুন ধরায়, সে আসলে নিজের টাকাকে পুড়িয়ে ফেলে। এটা অপচয়, যা ইসলামে হারাম। তাই আমরা বলতে পারি সিগারেট খাওয়া হারাম।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে ‘বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস’-এর আগে মুম্বাই, আহমেদাবাদ, লখনৌ, হায়দারাবাদ ও কলকাতায় সমীক্ষা করে জানা গেছে যে, প্রতি সপ্তাহে ধূমপায়ীদের গড় খরচ ৩৪৮ টাকা।
ষষ্ঠ: ‘তোমরা নিজেদের এবং অপরের ক্ষতি সাধন করো না’।
আর সিগারেট শুধু ধূমপায়ীদের ক্ষতি করে না; বরং যারা সিগারেট খায় না তাদেরও ক্ষতি করে। কারণ, ধূমপায়ীরা যে ধোঁয়া বাতাসে ছেড়ে দেয়, সেই ধোঁয়া কাছের লোকেরা প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। ফলে অধূমপায়ী ব্যক্তির শরীরেও ওই ধোঁয়া প্রবেশ করে। একে বলে পরোক্ষ ধূমপান (Passive Smoking)। পরোক্ষ ধূমপায়ীদের দেহের ক্ষতি সক্রিয় ধূমপায়ীদের চেয়ে বেশি হয়। কারণ এই ধোঁয়া অপরিশোধিত। তাই, নিকোটিনের মাত্রা বেশি থাকে।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ মারা যায় পরোক্ষ ধূমপানের কারণে।
আর ধূমপানে কষ্ট দেওয়া হয় পরিবারের সকলকে, প্রতিবেশীদের, সঙ্গী-সাথীদের, ইভেন মসজিদের মুছল্লীদেরকেও।
সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়ের ফলে বাচ্চার অত্যন্ত সংবেদনশীল শ্বাসনালী আর ফুসফুস ‘ইরিটেটেড’ হয়ে পড়ে। শুরু হয় সর্দি-কাশি। এ রকম চলতে থাকলে বারবার শ্বাসনালী ও ফুসফুসের প্রদাহ হয়ে ক্রনিক সর্দি- কাশি, বঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যেসব শিশুর অ্যাজমা আছে, তামাকের ধোঁয়া তাদের বারবার অ্যাটাক করে। অনেক সময় ইনহেলার বা ওষুধে কোনো কাজ হয় না। নিউমোনিয়ায় কাহিল হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। বাচ্চার ভোগান্তির শেষ থাকে না। হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করে রিলিফ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বরাবরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাসযন্ত্র।
সপ্তম: নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সম্পদ বিনষ্ট করা হারাম করেছেন’।
আর ধূমপান সম্পদ ধ্বংসকারী, যা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। ধূমপানের ফলে যেমন নিজের সম্পদ নষ্ট হয়, তেমনি সিগারেটের ছুড়ে ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত টুকরো অথবা দিয়াশলাই কাঠি থেকে অনেক ক্ষতি হতে পারে। এরকমই একটি পরিসংখ্যান হলো :
যুক্তরাষ্ট্রে হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ১০০০ লোক পুড়ে মারা যায় আগুনে, যে আগুন ছড়ায় ধূমপায়ীদের হাত থেকে। বিশ্বাস করারও সঙ্গত কারণ আছে যে, সিগারেটের আগুন লেগে পুড়ে মৃত্যুর হার সব দেশে একই রকম। হয়তো বা কোথাও একটু বেশি বা কম হবে।
যত অগ্নিকাণ্ড হয়, তার ২৫ শতাংশের মূলেই ধূমপায়ীরা। এ পরিসংখ্যানও যুক্তরাষ্ট্রের। এভাবে ওই দেশে ১৯৭০ সালে ১০,৭২০টি বাড়িতে আগুন লেগেছিল। যার ফলে নষ্ট হয়েছিল সাড়ে ৯ কোটিরও বেশি ডলারের সম্পত্তি। ধূমপানের খেসারত হিসাবে তার আগের বছর দাবানলে নষ্ট হয়েছিল ১০ কোটি ডলার।
‘আর তাছাড়া ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, মেডিকেল সায়েন্স একাধিক রোগের তালিকা দিচ্ছে ধূমপানের জন্য’।
ধূমপান করলেই মানুষ সাথে সাথে মারা যায় না। তাই আমরা ভাবি কত জনই বাচল-মরল? কিন্তু, এই ধারণা ভুল। যারা ধূমপায়ী, তারা প্রত্যেকেই ধূমপানের কুফল ভোগ করে। আর ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটি বৈজ্ঞানিক সত্য। এখন কেউ যদি তা অস্বীকার করে, তাহলে তো আর মিথ্যা হয়ে যায় না।
পরিসংখ্যান বলছে, ‘যেসব দেশে ধূমপান মৌরসীপাট্টা বিছিয়েছে, সেখানে ৬৫ বছর বয়সের নিচের পুরুষদের ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যুর ৯০ শতাংশের জন্য সে দায়ী; ৭৫ শতাংশ দায়ী ব্রনকাইটিসে মৃত্যুর জন্য, ২৫ শতাংশ দায়ী হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর জন্য। ব্রিটেনে হিসাব করে দেখা গেছে, ধূমপানের প্রত্যক্ষ বলি ৬৫ বছর বয়সের নিচে ২৫ হাজার লোক প্রতিবছরে মারা যান। ধূমপান না করলে ক্যান্সারের মোট মৃত্যুর হার ¼ অংশ কমে যেত।
চূড়ান্ত কথা
এ সবকিছু থেকে আমরা বলতে পারি, 'সিগারেট খাওয়া হারাম', মাকরুহ না।

Bujhlam Vai. Thank you.
Welcome.
thank you
Welcome.
Onek uporar pelam. Thank you.
Welcome
Excellent presentation!!