ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন কে । প্রথম আযান কে দিয়েছিল

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বা প্রথম আযান কে দিয়েছিল সে সম্পর্কে আমি "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন ছিলেন একজন হাবশী বা ইথিওপিয়ান ক্রীতদাস। আমরা আজকে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন এবং আজানের এর প্রচলন সম্পর্কে জানব।

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন,ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন,প্রথম মুয়াজ্জিন,ইসলামের প্রথম যুগের মুয়াজ্জিন,পৃথিবীর প্রথম আজান কে দিয়ে ছিলো,হযরত বিলাল (রা): ইসলামের প্রথম,প্রথম মাইকে আযান কানাডায়,ইসলামের দাওয়াত,কানাডার ইতিহাসে প্রথম মসজিদে প্রকাশ্যে আযান দেওয়া হল,মুয়াজ্জিন,সর্ব প্রথম যিনি আজান দিয়েছিলেন,যদি বাংলার এই জমিনে মুয়াজ্জিন আযান দেই,ইসলামে আযানের গুরুত্ব,কে কাবা শরিফের উপর উঠে আজান দিয়েছিলেন,মুয়াজ্জিন,আযানের দোয়া,মুয়াজ্জিনের ফজিলত,আযানের ইতিহাস;

হযরত বেলাল (রাঃ) এর পরিচয়

পুরো নাম বেলাল ইবনে রাবাহ। ৫৮০ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রাবাহ ছিলেন একজন আরব দাস এবং তার মা হামামাহ একজন প্রাক্তন ইথিওপিয়ান রাজকুমারী, যাকে আমূল-ফিল এর ঘটনার সময় আটক করে দাসী করে রাখা হয়। দাস হিসেবে জন্মানোয় বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার মনিব উমাইয়া বিন খালফ এর জন্য কাজ করতে হতো।

বেলাল একজন হাবশী বা ইথিওপিয়ান ক্রীতদাস। গায়ের রং কুচকুচে কালো। কিন্তু মানুষের বাইরের চেহারা টাই আসল চেহারা নয়, ভেতরটাই আসল। অর্থাৎ হৃদয়টা যার ধবধবে পরিস্কার, সেই কেবল সুন্দর মানুষ।

বেলাল (রাঃ) কালো হলেও তার হৃদয়টি ছিল চাঁদের মতো পরিষ্কার, জোছনার মত সুন্দর, সূর্যের মতো উজ্জ্বল। আর তার বুকে ছিল বর্জ্যের সাহস। সে সাহস ছিল সমুদ্রের মতো বিশাল, পর্বতের মত অনর।

বেলাল (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ

কালো মানুষের ভেতর যে এত রূপ, এত সৌন্দর্য থাকতে পারে তা বেলাল (রাঃ) কে না দেখলে বোঝাই যায়না। বিল্লালের এই সৌন্দর্যের আসল রহস্য হলো- তার আল্লাহর প্রতি নিখাদ বিশ্বাস। তাই ক্রীতদাস হয়েও বেলাল মনিবের রক্তচক্ষুকে ভয় না করে নবীর ডাকে সাড়া দিলেন। চুপে চুপে নয়, একেবারে সবার সামনে। প্রকাশ্যে তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে দিলেন।

বললেন, "আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভু নেই। ইসলাম একমাত্র জীবন বিধান। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আল্লাহর প্রেরিত মহানপুরুষ। যিনি সত্যের আলো নিয়ে আমাদের মাঝে এসেছেন মানুষের মুক্তির জন্য।" 

কালো মানুষটির এই দৃঢ়কন্ঠের আওয়াজ তার মনিব শুনতে পেল, শুনতে পেল কাফেররাও। তারা ক্রোধে ফেটে পরলো। বলল, কেনা গোলাম কালো মানুষের এত বড় সাহস!

বেলাল তাদের কথা যেন শুনতেই পাননি। কারণ, তিনি তো জানেন দুর্বলের উপর সবলরা সবসময়ই অত্যাচার করে। জুলুম এবং নির্যাতন চালায়। এ আবার নতুন কি?

কাফেররা বলল, তুমি মোহাম্মদের পথ থেকে ফিরে এসো বেলাল। তা না হলে তোমার কপালে অনেক দুর্ভোগ আছে, অনেক কষ্ট আছে।

আরও পড়ুনঃ

হেসে উঠলেন বেলাল (রাঃ)। কালো চামড়ার বেলাল এর ভেতর থেকে ছিটকে পড়ল হাসির তুফান। বললেন, আমাকে ভয় দেখাচ্ছো? তোমরা কি জানো, যে হৃদয় একমাত্র আল্লাহ এবং তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবাসে, সে হৃদয় দুনিয়ার আর কাউকেই ভয় করে না। কাউকেই পরোয়া করে না। তোমরা আমাকে কিসের ভয় দেখাও? তোমরা আমাকে কি করতে পারো? মারবে? মারতে পারো। কিন্তু আমার বিশ্বাসকে তো আর কেড়ে নিতে পারবে না। কখনোই তা সম্ভব নয়।

গোলামের মুখে এই দুঃসাহসের কথা শুনে কাফেররা ক্ষেপে গেল। জ্বলে উঠলো তাদের পাষণ্ড হৃদয়। তারা শুরু করলো পাশবিক নির্যাতন। অত্যাচারী আবুজাহেল এবং বেলালের মনিব উমাইয়া বিন খালফ, মস্তবড় কাফের নেতা, বিশাল তাদের দলবল।

বেলাল (রাঃ) এর উপর অত্যাচার ও নির্যাতন

আবু জাহেলের হুকুমে বেলালের উপর ক্রমাগত চলছে নির্যাতন আর নিষ্ঠুরতম অত্যাচার। কাফেররা তাকে আগুনের মত উত্তপ্ত মরুভূমির বালির উপর নির্দয়ভাবে মারতো। পাথরের কুচি এবং জ্বলন্ত আগুনের উপর তাকে শুইয়ে দিত। তার গলায় দড়ি বেঁধে কিশোর-যুবকদের হাতে তুলে দিতো। তারা খেলার ছলে বেলালকে টেনেহিঁচড়ে ছাগলের মত ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াতো মক্কার অলিতে-গলিতে। ঝাঁজরা হয়ে যেত বেলালের শরীর। তার দেহ থেকে ঝরে পড়তে টাটকা রক্ত।

আবু জাহেল আর উমাইয়া বিন খালফ নিজ হাতে বেলালাকে শাস্তি দিত। উপুড় করে শুইয়ে বেলালের পিঠের উপর পাথরের বড় বড় খন্ড চাপিয়ে দিত। মরুভূমির মধ্যে সূর্যের চোখ থেকে যখন আগুন বের হয়, ঠিক সেই সময়ে আবু জাহেল বেলালের উপর পশুর চেয়েও জঘন্য আচরণ করতো। গরম বালিতে বেলালের বুক পুড়ে যেত। পিঠের উপর ভারী পাথরের চাপে তিনি বালির মধ্যে দেবে যেতেন। পিপাসায় বুক গলা শুকিয়ে যেত। পিপাসা এবং যন্ত্রনায় তিনি ছটফট করতেন। বেলাল (রাঃ) এর কষ্ট দেখে হায়নার মত হেসে উঠতো নরপশু আবু জাহেল এবং উমাইয়া গংরা।

বলতো, "এখনো সময় আছে বেলাল, মোহাম্মদের আল্লাহ থেকে তুমি ফিরে এসো। তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তোমার উপর আর কোনো অত্যাচার করা হবে না।"

দুঃসাহসী বেলাল (রাঃ)

পর্বতের মত যার বিশ্বাস! তিনি তার বিশ্বাস থেকে একচুলও নড়লেন না। বরং আবু জাহেলের সকল অত্যাচার এর মধ্যে তিনি একটাই জবাব দিতেন, আল্লাহু আহাদ, আল্লাহু আহাদ, যার অর্থ আল্লাহ এক, আল্লাহ এক। বেলাল (রাঃ) এর জবাবে পাপীষ্ঠ আবু জাহেল-উমাইয়ারা আরো বেশি ক্ষেপে যেত। আর সেই সাথে বেড়ে যেত অত্যাচারের মাত্রা। কখনো গরুর কাঁচা চামড়ায় ভরে, আবার কখনো বা লোহার বর্ম পরিয়ে বেলাল (রাঃ) কে মরুভূমির মধ্যে, যখন দোযখের মতো সূর্যের আলোর তেজ, সেই সময় বসিয়ে রাখত।

কষ্টে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যায় যায় অবস্থা, এমন সময় তাঁকে পাপিষ্ট আবু জাহেল বলতো, এখনো সময় আছে ফিরে এসো বেলাল। আল্লাহ এবং মোহাম্মদের পথ থেকে ফিরে এসো। আমরা তোমাকে ছেড়ে দিবো। 

পর্বতের মত অনর বেলাল। শত অত্যাচারেও তার বিশ্বাস থেকে ফিরে আসেনি। তখনো, সেই ক্লান্ত, মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়েও বেলালের মুখে একই উচ্চারণ, "আল্লাহু আহাদ। আল্লাহু আহাদ"।

তিনি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবেসে যাবতীয় ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন হাসিমুখে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করা এবং নবীর সাহচর্য ও ভালোবাসা লাভ করাই ছিল বেলালের একমাত্র উদ্দেশ্য।

ক্রীতদাস থেকে মুক্তি

একদিন বেলালের উপর অকথ্য নির্যাতনের বেদনাদায়ক দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। তিনি শিউরে উঠলেন। অনেক অর্থের বিনিময়ে গোলাম বেলালকে কিনে নিয়ে মুক্ত করে দিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)।

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হিসাবে প্রথম আজান

বেলালকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন রাসূল (সাঃ)। বেলালকে তিনি একদিন বললেন, বেলাল আযান দাও। আমরা নামাজ আদায় করব। বেলাল (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশে আযান দিলেন। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হিসাবে বেলাল (রাঃ) - ই প্রথম আযান দেন। যাকে বলা হত "সাইয়িদ আল মুয়াজ্জিন"।

বেলাল এর উচ্চ কণ্ঠে আযানের ধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত হয়ে যেত। চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। তার আযান শুনে কোনো মুসলিমই আর ঘরে বসে থাকতে পারত না। পুরুষ, নারী, যুবক, বৃদ্ধ এমনকি শিশুরা পর্যন্ত বেলালের আযান শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ত।

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন এর মৃত্যু

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! একসময়ের মনিব উমাইয়া বিন খালফ বদর যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করল তার ক্রীতদাস বেলাল (রাঃ) এর হাতে। সময়ের নিষ্ঠুর বাস্তবতা এটাই যে, সে জায়গা বদলায়। কখনো আবু জাহেলের, কখনো বেলালের।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে ৫৯ বছর বয়সে সিরিয়ার দামেস্ক থেকে মহান রবের সান্নিধ্যে চলে যান।

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন,ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন,প্রথম মুয়াজ্জিন,ইসলামের প্রথম যুগের মুয়াজ্জিন,পৃথিবীর প্রথম আজান কে দিয়ে ছিলো,হযরত বিলাল (রা): ইসলামের প্রথম,প্রথম মাইকে আযান কানাডায়,ইসলামের দাওয়াত,কানাডার ইতিহাসে প্রথম মসজিদে প্রকাশ্যে আযান দেওয়া হল,মুয়াজ্জিন,সর্ব প্রথম যিনি আজান দিয়েছিলেন,যদি বাংলার এই জমিনে মুয়াজ্জিন আযান দেই,ইসলামে আযানের গুরুত্ব,কে কাবা শরিফের উপর উঠে আজান দিয়েছিলেন,মুয়াজ্জিন,আযানের দোয়া,মুয়াজ্জিনের ফজিলত,আযানের ইতিহাস
ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল (রাঃ) এর কবর মুবারক

চূড়ান্ত কথা

হযরত বেলাল (রাঃ) এক সময়ের হাবশী ক্রীতদাস। সেই কালো মানুষটি ছিলেন সত্যের পক্ষে অত্যন্ত বিনয়ী। আর অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে ছিলেন অনড় পর্বত।

বেলাল কেবল একজন কালো মানুষের নাম নয়, বরং ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন, সত্য ও বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত দুর্ভেদ্য এক কালো পাহাড়ের নাম। যে পাহাড় থেকে সত্য, বিশ্বাস এবং সাহসের আলো ঝড়ে পড়তো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url