কিয়ামতের আলামত সমূহ । কিয়ামতের ৪১ টি আলামত
কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আমি "Islamic Solution - ইসলামিক কথা" এই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে সাজিয়ে একটি পোষ্ট করছি। কিয়ামতের আলামত দুই ধরনের। এক ছোট আলামত, দুই বড় আলামত। আমরা আজকে কিয়ামতের ছোট আলামত সম্পর্কে জানব।
|
সমস্ত প্রশংসা আকাশ জমিন এর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর জন্য। যিনি জীবন-মরনের একমাত্র মালিক।
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এই পৃথিবীতে আগমন করেছি তার ইচ্ছাতেই আমরা আবার এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। একদল আসছে, অন্য দল বিদায় নিচ্ছে। মানব জাতির এ আগমন - প্রস্থানকে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে তুলনা করা চলে। এক ঝাঁক ঢেউ সমুদ্র সৈকতে এসে শেষ হয়। তার পিছ ধরেই আরেক ঝাঁক ঢেউ আগমন করে এবং তীরে এসে শেষ হয়।
বর্তমান পৃথিবীতে আপনি যাদের সাথে বাস করছেন, তাদের কেউ পাঁচশত বছর পূর্বের মানুষ নয়। তারা এ পৃথিবীতে আপনার মতই বসবাস করেছিল। তারা চলে যাওয়ার পর আপনি এখন তাদের স্থান দখল করে বসে আছেন। আপনিও চলে যাবেন। আপনার স্থানে অন্যরা আসবে।
মানবজাতির চলার এই গতি একদিন থেমে যাবে। সেদিন পৃথিবীতে বসবাসরত সকল মানুষ
একসাথে নিঃশেষ হয়ে যাবে। সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। রাতের তারা গুলোর আলো
নিভে যাবে। সাগরের ঢেউ থেমে যাবে। নদীর পানি শুকিয়ে যাবে। এখানেই শেষ নয়, বরং
এটি মানবজাতির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন মাত্র।
অচিরেই এমন একদিন আসবে যেদিন আমরা সবাই নতুন এক জগতে ফিরে যাব। সেখানে আমাদের সকল কাজের হিসাব নেয়া হবে।
|
| সূরা বাকারা, আয়াত - ২৮১ |
এই দিনকে কুরআনের ভাষায় বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও আখিরাত দিবস, কোথাও বিচার দিবস, কোথাও মহান দিবস, কোথাও কিয়ামত দিবস, মহাপ্রলয় ইত্যাদি।
কুরআন মাজীদের এমন পৃষ্ঠা খুব কমই পাওয়া যাবে, যেখানে পরকালের অর্থাৎ কিয়ামত দিবসের কথা আলোচিত হয়নি। কিয়ামতের আলামত এর প্রতি ঈমান আনয়ন করা আখিরাতের উপর ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কুরআন ও সুন্নাহর অনেক স্থানে আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনার পরেই আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়নের কথা বলা হয়েছে এবং কিয়ামতের আলামত গুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে কিয়ামতের ছোট-বড় সকল আলামত মুখস্থ করিয়েছেন। সাহাবীগণ তা শিখেছেন এবং তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
মানুষ হয়ত দুনিয়া ও এর ভোগ-বিলাসে নিমজ্জিত হতে পারে এবং কেয়ামত, পরকাল এবং এর শাস্তি ও নিয়ামত ভুলে যেতে পারে। ফলে আখেরাতের কল্যাণের জন্যে সে আমল করাও ছেড়ে দিতে পারে। এ জন্য মহান আল্লাহ কেয়ামতের পূর্বে এমন কতগুলো আলামত নির্ধারণ করেছেন, যা আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের পূর্বে যে সমস্ত আলামত আসবে বলে ঘোষণা করেছেন বড় আলামত গুলো ব্যতীত অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। যেগুলো এখনও বাস্তবায়িত হয়নি অদূর ভবিষ্যতে তা অবশ্যই বাস্তবে পরিণত হবে এবং সকল আলামত প্রকাশ হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে বিচার দিবস তথা রোজ কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।
কিয়ামত কবে হবে
কিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। এ বিষয়টি ইলমুল গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয় এর অন্তর্গত। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য দলিল রয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামত ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে বেশি বেশি আলোচনা করতেন। তাই লোকেরা তাকে কেয়ামতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করত। তিনি তাদেরকে সংবাদ দিতেন যে, কেয়ামতের বিষয়টি একটি গাইবি বিষয়। আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য কেউ কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে অবগত নয়।
|
| সূরা আরাফ, আয়াত - ১৮৭ |
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জানতেন না, জিব্রাইল আলাই সাল্লাম ও নয়, এমনকি যে ফেরেশতা শিঙ্গা মুখে নিয়ে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় আছেন, তিনিও কিয়ামতের সময় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
কেয়ামতের নির্দিষ্ট সময় গোপন রাখার উদ্দেশ্য হলো মানুষ যাতে সব সময় সতর্ক থাকে, পরকালের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং সর্বদা সৎ কাজে লিপ্ত থাকে।
এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামত কখন হবে? উত্তরে তিনি বললেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কি প্রস্তুত করেছ? সে বলল কোনকিছুই প্রস্তুত করিনি। তবে আমি আল্লাহকে ভালবাসি এবং আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি যাকে ভালোবাসো
কিয়ামতের দিন তুমি তার সাথেই থাকবে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা একথা শুনে যতটা খুশি হলাম তত খুশি আর কখনো
হইনি।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, আমি নবীকে ভালবাসি, আবু বকরকে ভালোবাসি এবং ওমরকে ভালোবাসি। আশা করি তাদেরকে ভালোবাসার কারণে আমি তাদের সাথেই থাকব যদিও আমি তাদের মত আমল করতে পারিনা।
কিয়ামতের ছোট আলামত এর মধ্যে রয়েছেঃ
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন ও মৃত্যু।
- চাঁদ দ্বিখন্ডিত হবে।
- বাইতুল মাকদিস (ফিলিস্তিন) বিজয় হবে।
- ধন সম্পদ বৃদ্ধি পাবে।
- কেয়ামতের পূর্বে অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে।
- ভন্ড ও মিথ্যুক নবীর আগমন হবে।
- হেজাজ অঞ্চল (বর্তমান সৌদি আরবের পশ্চিম অংশ) থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবে।
- আমানতের খেয়ানত হবে।
- কেয়ামতের পূর্বে দ্বীনি ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে।
- অন্যায় ভাবে জুলুম-নির্যাতনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
- যেনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে।
- সুদখোরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
- গান-বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাবে।
- মদ্যপান হালাল মনে করবে।
- মসজিদ নিয়ে লোকেরা গর্ব করবে।
- দালানকোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতা করবে।
- দাসী তার মনিবকে জন্ম দিবে।
- সময় দ্রুত চলে যাবে।
- মুসলিমরা শির্কে লিপ্ত হবে।
- ঘনঘন বাজার মেলা হবে।
- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে।
- লোকেরা কালো রং দিয়ে চুল দাড়ি রাঙ্গাবে।
- কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে।
- ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
- ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে।
- ভূমিধস ও চেহারা বিকৃতি শাস্তি দেখা দিবে।
- মানুষ তার পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দিবে।
- বেপর্দা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
- মুমিনের স্বপ্ন সত্যি হবে।
- মানুষ সুন্নতি আমল সম্পর্কে গাফিলতি করবে।
- নতুন মাসের চাঁদ বড় হয়ে উদিত হবে।
- মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবে।
- মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবে।
- নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে।
- হঠাৎ মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
- আরব উপদ্বীপ নদ-নদী ও গাছপালায় পূর্ণ হয়ে যাবে।
- প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ফসল হবে না।
- ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় বের হবে।
- মানুষ জড় বস্তু এবং বন্য প্রাণীর সাথে কথা বলবে।
- ফেতনায়ে পতিত হয়ে মানুষ মৃত্যু কামনা করবে।
- আরবের কাহতান গোত্র থেকে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও ন্যায়পরায়ণ লোক বের হবে।
চুরান্ত কথা
এই ছিল কিয়ামতের ছোট আলামত নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। কিয়ামতের আলামত নিয়ে এটি ছিল প্রথম পর্ব। কিয়ামতের সম্পুর্ন আলামত সম্পর্কে জানতে আমাদের কিয়ামত সিরিজ পেইজে চোখ রাখুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক হেদায়েত দান করুন এবং আমাদের সবাইকে মাফ করুন।


