এপ্রিল ফুল মুসলমানদের রক্তাত্ব সঠিক ইতিহাস-যা সবার জানা উচিত
পহেলা এপ্রিল। আমরা এপ্রিল ফুল শব্দটা প্রত্যেকেই জানি। আমরা এপ্রিল ফুল এ একে অপরকে মিথ্যা বলে মজা পাই। কিন্তু এর পিছনে যে একটি রক্তাক্ত ইতিহাস আছে সেই ইতিহাসটা কী আমরা কেউ জানি?
আমরা জানি মুসা বিন নুসাইর এবং তারেক বিন যিয়াদ এর নেতৃত্বে স্পেন জয় করেন মুসলমানরা। সাড়ে ৭০০ বছর মুসলমানরা নেতৃত্ব দেয় ইউরোপে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষাদিক্ষা প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ইউরোপকে উন্নত করে মুসলমানরা। সেই স্পেনে ১৪৯২ সালে ঘটে এক রক্তাক্ত ঘটনা। যাকে ইতিহাস বলে এপ্রিল ফুল।
এপ্রিল ফুল শব্দটির ইংরেজি অর্থ এপ্রিলের বোকা। এপ্রিল ফুল ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। ১৪৯৯ সালের পহেলা এপ্রিল রাজা ফার্ডিনান্ডের ঘৃণ্যতম প্রতারণার মাধ্যমে স্পেনের রাজধানীতে খ্রিস্টানদের সম্মিলিত বাহিনী অসংখ্য মুসলিম নারী পুরুষকে জীবন্ত দগ্ধ করে মেরেছে। বিশ্ব খ্রিস্টান সম্প্রদায় তাদের রচিত প্রতারণা কে স্মরণ করে রাখতে এ দিনটিকে এপ্রিল ফুল হিসেবে পালন করে।
এপ্রিল ফুল মূলত মুসলমানদের লজ্জা দেওয়ার একটি ইতিহাস। অনেক অজ্ঞ মুসলিমরা বিশ্ব বোকা' দিবস হিসেবে এদিনে পরস্পরকে মিথ্যা বলে ধোঁকা দিয়ে থাকে।
স্পেনে তখন মুসলমানদের শাসন চলছে। শাসক ছিলেন বাদশা হাসান। বাদশার ছেলে আবু আব্দুল্লাহ যিনি খ্রিস্টানদের সাথে হাত মিলিয়ে বাবাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। খ্রীষ্টানগণ বাদশার বিরুদ্ধে তার পুত্র আবু আব্দুল্লাহ কে দিয়ে বিদ্রোহ করায়। বাবাকে গদিচ্যুত করলে তাকে ক্ষমতায় বসানো হবে এমন আশ্বাস পেয়ে পিতার বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহ করে। বাদশা হাসান ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান। আবু আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর শুরু হয় স্পেনে মুসলমানদের পতন। খ্রিস্টানরা জানতো আবু আব্দুল্লাহর নৈতিক কোন অবস্থান নেই। তিনি দুর্বল মানসিকতার। তাই তার বাবা হাসানকে সরিয়ে আবু আব্দুল্লাহ কে ক্ষমতা বসায়। যাতে করে স্পেনের দখল খ্রিস্টানরা নিতে পারে। যখন ক্ষমতায় বসে আবু আব্দুল্লাহ, তখন রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার যৌথবাহিনী স্পেন আক্রমণ করে। আবু আব্দুল্লাহ আক্রমণ নিয়ে আলোচনার জন্য দরবারে বিশেষ সভার আয়োজন করেন। ফার্ডিনান্ড আবু আব্দুল্লাহ কে আশ্বাস দিল যে, তারা বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তবে জীবন দান করা হবে। দুর্বল রাজা ও তার সভাসদগণ অতীতের চুক্তিভঙ্গের রেকর্ড ভুলে গিয়ে ফার্ডিনান্ড সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অনেক সাহসী সৈনিক আত্মসমর্পণের পরিবর্তে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন। আর আবু আব্দুল্লাহর পক্ষের লোকেরা খ্রিস্টানদের কাছে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেন। ফলে সহজেই রাজা পঞ্চম ফার্ডিনান্ড সমস্ত শহর দখল করে নেয়।
আরও পড়ুনঃ
১৪৯৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর মুসলিম বাহিনীর শেষ আশ্রয়স্থল রাজধানী গ্রানাডার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ফার্ডিনান্ড এর বাহিনী। ফার্ডিনান্ড এর শক্তির সামনে ছোট ছোট মুসলিম শাসকরা ছিল দুর্বল। বলা যেতে পারে প্রায় শক্তিহীন। মুসলিম সেনাপতি মুসা আত্মসমর্পণের চেয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরন কে সম্মানজনক বলে মেনে নেন। ক্ষমতালোভী আবু আব্দুল্লাহ খ্রিস্টানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণে রক্ষা পাবেন বলে যে ধারণা করেছিলেন তা মিথ্যায় পরিণত হয়। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফার্ডিনান্ড বাহিনী শহর অবরোধ করে রাখে। বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যায় কিছু মুসলিম। মুসলিমদের ধর্মচ্যুত করার পাঁয়তারা চলে ফার্ডিনান্ড এর রাজপ্রাসাদে। মুসলমানদেরকে কোরআন পড়া নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ করা হয় আরবি ভাষা পড়া। বহু মুসলমান কে বাধ্য করা হয় খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের। রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার বাহিনী শুরু করে নৃশংস ও বর্বর পন্থায় হত্যাযজ্ঞ। লুণ্ঠন ও ধর্ষণও চলে একটানা। অত্যাচারের মাত্রা সীমা অতিক্রম করলে মুসলিমরা বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহী এসব লোকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি একপর্যায়ে চরম এক নৃশংস কৌশল গ্রহণ করে রাজা ফার্ডিনান্ড শক্তিশালী খ্রিস্টান বাহিনী মুসলমানদের উপর দলবল তথা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালালে মুসলমানগন সকল শক্তি সামর্থ্য দিয়ে রাজা ফার্ডিনান্ড ও তাদের দলের লোকের আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। মুসলমান এবং খ্রিষ্টানদের সাথে চলা তুমুল সংঘর্ষ বন্ধ হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে মুসলমানরা বিজয়ী হচ্ছে বলেও ধারণা করা হয়। তখন রাজা ফার্ডিনান্ড দ্বিতীয় প্রতারণার ফাঁদ পাতে। তিনি ঘোষনা করে বলেন হে মুসলমানগন যদি তোমরা আমাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে চাও তাহলে আমাদের দুটি প্রস্তাব নির্দ্বিধায় মেনে নাও।
১) তোমরা অস্ত্র ত্যাগ করে স্পেন তথা গ্রানাডার সকল বড় বড় মসজিদে অবস্থান করো। তাহলে তোমরা সকলে নিরাপদে থাকবে। কেউ তোমাদের উপর আক্রমণ করবে না।
২) যারা নৌ জাহাজে আশ্রয় নিবে তাদেরকে নিরাপদ এর সাথে অন্য কোন মুসলিম দেশে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
ইহুদী-খ্রিস্টানদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য অসহায় মুসলমানরা মসজিদে এবং জাহাজে আশ্রয় গ্রহণ করে। ৮৯৭ হিজরী ১২ই রবিউল আউয়াল মসজিদগুলোতে মুসলমান নর নারী ও শিশুরা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদছে। তখন রাতের আধারে মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয় খ্রিস্টান সেনারা এবং ভেতরে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। আর যারা সাগর পাড়ি দিয়ে মরক্কো সহ অন্যান্য মুসলিম দেশে চলে যাওয়ার জন্য জাহাজে উঠেছিল তাদের জাহাজ পানিতে ডুবিয়ে এবং আগুন ধরিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ইতিহাস বলে রাজা ফার্ডিনান্ড প্রতারণার মাধ্যমে মসজিদে এবং জাহাজে সাত লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করে। তিনদিন পর্যন্ত চলে হত্যার উৎসব। সেদিন অসহায় নর নারী ও শিশুদের বুকফাটা আর্তচিৎকারে পৃথিবীর বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মুসলমানদের রক্তে রক্তাক্ত হয়েছিল স্পেনের পুরো জমিন। মুসলমানদের রক্তে সাগরের পানির লাল হয়েছে। এ গণহত্যার পর যেসব মুসলমান আন্দালুসিয়ায় রয়ে গিয়েছিলেন তাদেরকে প্রতারক রাজা ফার্ডিনান্ড এর ছেলে তৃতীয় ফিলিপ সহায় সম্বল হীন অবস্থায় সমুদ্রপথে নির্বাসিত করেন। তাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি।
ইতিহাস বলে তাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক লোকই জীবিত ছিল। বিপুল সংখ্যক মানুষকে সমুদ্রের গহীন তলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
৭১২ খ্রিস্টাব্দে এক মুসলিম সেনাপতি মুসা যে রাজ্যে কালেমার পতাকা উদয়ন করেছিলেন, ৭৮০ বছর পরে ১৪৯২ সালে প্রতারক ফার্ডিনান্ড এর মাধ্যমে সে রাজ্যের পতন ঘটে।
ইসলামকে ইউরোপ থেকে মুছে ফেলার জন্য রাজা ফার্ডিনান্ড এবং তার পাদ্রীরা একটি বৈঠক করলেন। সেখানে খ্রিস্টান পাদ্রীরা রাজা ফার্ডিনান্ড কে পরামর্শ দিলেন মুসলমানদের ভেতর থেকে এমন কিছু লোককে বাছাই করতে হবে যারা ক্ষমতা লোভী ও অর্থলোভী কিংবা নারীলোভী। যারা পরকালের চেয়ে দুনিয়া কে বেশি ভালোবাসে। রাজা ফার্ডিনান্ড খ্রিস্টান পাদ্রীদের পরামর্শ মতে মুসলমানদের ভেতর থেকে কিছু বিশ্বাসঘাতক কে খুঁজে বের করলেন। যে স্পেন মুসলমানরা ৭৫০ বছর শাসন করেছিল প্রচন্ড প্রতাপ এর সাথে সেই স্পেনের রাজা হাসানের ছেলে আবু আব্দুল্লাহ ছিল সেই বিশ্বাসঘাতক। যিনি ক্ষমতার লোভে বাবাকে গদিচ্যুত করে রাজা ফার্ডিনান্ড এর সাথে হাত মিলান। পরবর্তীতে রাজা ফার্ডিনান্ড সেই দুর্বল চিত্তের বিশ্বাসঘাতক আবু আব্দুল্লাহ কে ক্ষমতাচ্যুত করে এভাবে ইউরোপে ইসলামের কবর দেয়।
পৃথিবীর যে স্থানেই মুসলমান সালতানাতের পতন হয়েছে তার প্রত্যেকটা ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে সেখানেই মুসলমানদের মধ্যে কিছু বিশ্বাসঘাতক ছিলেন। যাদেরকে ব্যবহার করে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়েছে ক্রসেডাররা।
‘এপ্রিল ফুল’-এর এই মর্মান্তিক ইতিহাস জানারও পর কি মুসলিমদের এদিনটিকে আমোদ - প্রমোদ কিংবা আনন্দের দিন হিসেবে পালন করা উচিৎ হবে?? কখনোই না।
সবশেষে
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ‘এপ্রিল ফুল’-এর প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে না জানার কারণে মুসলমানদের পূর্বসূরিদের দুর্ভাগ্যেকে আনন্দের খোরাক বানিয়ে ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করা হচ্ছে। মুসলিমরা আর কতকাল আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকবে? নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞতার ধারা আর কতদিন মুসলমানদের মধ্যে বিরাজ করবে? অথচ এই অজ্ঞতাই মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ।
